Droupadi Murmu: সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন? চিঠি দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, বেনজির সংঘাত
Supreme Court: সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্র বনাম রাজ্য সংঘাত যত বেড়েছে, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ততই প্রশ্ন উঠেছে।
নয়াদিল্লি: বিলে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতিকেও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদে গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয় নিয়ে আদালতের সঙ্গে পরামর্শের অধিকার দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। সেই আইনেই সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে আদালত আদৌ সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে কি না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। (Droupadi Murmu)
সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্র বনাম রাজ্য সংঘাত যত বেড়েছে, রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ততই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ুর মতো অবিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, তিনি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই আবহেই একটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে গেলে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির অনির্দিষ্টকাল বিল আটকে রাখা নিয়ে সময়সীমা বেঁধ দেয় দুই বিচারপতির বেঞ্চ। সেই নিয়ে বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিচারবিভাগ এবং কার্যনির্বাহী বিভাগের মধ্যে এমন সংঘাত আগে কখনও দেখা যায়নি। আর সেই আবহেই সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া চিঠিতে মোট ১৪টি প্রশ্ন তুললেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু— (Supreme Court)
১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০-র আওতায় রাজ্যপালের কাছে কোনও বিল পাঠানো করা হলে, তাঁর সামনে কী কী সাংবিধানিক উপায় রয়েছে?
২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০-র আওতায় কোনও বিল পেশ করা হলে, রাজ্যপাল কি মন্ত্রী পরিষদের সহযোগিতা ও পরামর্শের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবেন?
৩) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০-র আওতায় রাজ্যপালকে যে বিচক্ষণতা প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা কি বিচারযোগ্য?
4) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুযায়ী (আইনি প্রক্রিয়া থেকে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালের রক্ষাকবচ) রাজ্যপালের কাজকর্মে বিচারবিভাগের পর্যালোচনা কি একেবারে নিষিদ্ধ?
৫) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০০ অনুযায়ী, রাজ্যপালের ক্ষমতাপ্রয়োগের সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। সেক্ষেত্রে বিচারবিভাগ নির্দেশ দিয়ে কি সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে এবং ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতিও কি বলে দিতে পারে?
৬) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০১-এর আওতায় রাষ্ট্রপতিকে যে বিচক্ষণতা প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা কি বিচারযোগ্য?
৭) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০১ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাপ্রয়োগের সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। সেক্ষেত্রে বিচারবিভাগ নির্দেশ দিয়ে কি সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে এবং ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতিও কি বলে দিতে পারে?
৮) অনুচ্ছেদ ১৪৩ অনুযায়ী, ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কি সুপ্রিম কোর্টের মতামত জানতে বাধ্য? রাজ্যপাল যদি কোনও বিল রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষণ করেন, সেক্ষেত্রেও কি রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে?
৯) অনুচ্ছেদ ২০০ এবং অনুচ্ছেদ ২০১-এর আওতায় রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে, সেগুলি কি আদালতে বিচারযোগ্য? কোনও বিল আইনে পরিণত হওয়ার আগে, আদালত কি তার বিষয়বস্তু নিয়ে বৈচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে?
১০) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২-এ রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে যে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা কি কোনও ভাবে পাল্টানো যায়?
১১) রাজ্য আইনসভা কোনও আইন প্রণয়ন করলে, রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া কি তা আইনে পরিণত হতে পারে?
১২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৫(৩) শর্ত অনুযায়ী, সংবিধান ব্যাখ্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে, সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে কমপক্ষে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানো কি দস্তুর নয়?
১৩) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কি আইনি বিষয়গুলির মধ্যে সীমিত, না কি সুপ্রিম কোর্ট এমন নির্দেশ দিতে পারে যা প্রচলিত সাংবিধানিক বা আইনি অথবা পদ্ধতিগত বিধানের পরিপন্থী?
১৪) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩১-এর অধীনে মামলা দায়ের হওয়া ব্যাতীত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের অন্য কোনও এক্তিয়ার কি সংবিধান দ্বারা নিষিদ্ধ?
তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত নিয়ে একটি মামলা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছয়। রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিলগুলি রাজ্যপাল আটকে রাখছেন, এমনকি বিল পুনরায় পাস করিয়ে পাঠানোর পরও সেই বিল মাসের পর মাস পড়ে থাকছে বলে অভিযোগ করে তামিলনাড়ু সরকার। সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপাল নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্তে বাধাসৃষ্টি করছেন বলেও ওঠে অভিযোগ। সেই নিয়ে শুনানিতে মাসখানেক আগে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে বিল নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়। সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যে সীমিত, তাও স্মরণ করিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের নেতা-সাংসদরা গোড়াতেই ফুঁসে ওঠেন। সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কে, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এর পর দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ও প্রকাশ্যে সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেন। আর সেই আবহেই সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদে সাধারণ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে শলা-পরামর্শের যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে আদালতের মতামত জানতে চাইলেন তিনি।