দেশের চাহিদা মেটানোই লক্ষ্য! রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে নেটোর হুঁশিয়ারির জবাব দিল ভারত, বার্তা আমেরিকাকেও?
রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে তার বাণিজ্যিক বন্ধু দেশগুলির উপরেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর পর নেটো প্রধান নাম করে ভারত-সহ তিন দেশকে বার্তা দেন।
দেশের মানুষের জ্বালানির চাহিদা মেটানোই ভারত সরকারের অগ্রাধিকার। সেটাই প্রধান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য যা করতে হয়, সরকার করবে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসঙ্গে এমনটাই মন্তব্য করলেন নয়াদিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। সম্প্রতি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর মহাসচিব মার্ক রাট ভারতের নাম করে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে তার ফল ভুগতে হবে। চিন এবং ব্রাজ়িলের নামও করেছিলেন তিনি। নেটো প্রধানের সেই হুঁশিয়ারিরই জবাব দিল ভারত। অনেকে মনে করছেন, বিদেশ মন্ত্রকের এই বক্তব্যে পরোক্ষে আমেরিকাকেও বার্তা দেওয়া হল। যদিও আমেরিকার নাম করেননি রণধীর।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে দীর্ঘ দিন আলোচনা চালাচ্ছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক বার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। পুতিন তাঁর অবস্থানে অনড়। কিছু দিন আগে ট্রাম্প হুঁশিয়ারির সুরে জানান, ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি সমঝোতায় পৌঁছোতে রাজি না হলে রাশিয়া তো বটেই, তার সঙ্গে যে সমস্ত দেশ বাণিজ্য করে, তাদের উপরেও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পরেই নেটো প্রধান ভারত, চিন, ব্রাজ়িলের নাম উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দেন। এই তিন দেশের প্রধানদের পুতিনের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে যুদ্ধ থামানোর পরামর্শ দিতে অনুরোধ করেন। মার্ক বলেছিলেন, ‘‘আপনি যদি চিনের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিংবা ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট হন, এবং নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যান, তাদের থেকে তেল ও গ্যাস কিনতে থাকেন, তা হলে কী হতে পারে আপনি জানেন! মস্কোয় যিনি বসে আছেন, তিনি যদি শান্তি আলোচনাকে গুরুত্ব না দেন, তা হলে আপনাদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। সুতরাং দয়া করে পুতিনকে ফোন করুন এবং যুদ্ধ থামাতে বলুন।’’
নেটো প্রধানের সেই বক্তব্য প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রণধীরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট দেখেছি। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি। আমাদের দেশের মানুষের জ্বালানির চাহিদা মেটানো খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে বাজারে কী অফার চলছে, আমরা সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিই। বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখা হয়। এই বিষয়ে কোনও দ্বিমুখী মানদণ্ড (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড) থেকে আমরা সতর্ক থাকব।’’
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, নেটোর একাধিক সদস্য দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনে। ইউরোপেও রাশিয়ার তেলের ক্রেতা প্রচুর। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার তরলীকৃত স্বাভাবিক গ্যাস এবং পাইপলাইন গ্যাসের সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। রাশিয়ার তেল সবচেয়ে বেশি কেনে তুরস্ক, নেটোর অন্যতম সদস্য দেশ।