'ভোটার তালিকা নিয়ে হেনস্থা করবেন না মানুষকে, রাজ্যেরই চাকরি করেন এটা মনে রাখুন’! বিএলও-দের বার্তা মমতার
ভোটার তালিকা থেকে রাজ্যের দীর্ঘ দিনের ভোটারদের নাম যাতে বাদ না-পড়ে, সে দিকেও নজর রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরুন একটা ছেলে চার দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে, তার নাম বাদ দিয়ে দেবেন? তা কি হয়?”

ভোটের বিহারে বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) করছে নির্বাচন কমিশন। তবে গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই আবহে বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বাংলায় বুথ স্তরের আধিকারিক বা বিএলও-দের কাছে মানুষজনকে অযথা হেনস্থা না-করার আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, তাঁরা রাজ্য সরকারেরই কর্মচারী। সোমবার প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএলও-দের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, ভোটার তালিকা থেকে যাতে কারও নাম বাদ না-যায় সেটা দেখার।” বিএলও-দের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর দায়িত্ব নেয় নির্বাচন কমিশন। তার আগে এবং পরে রাজ্য সরকারের হাতেই প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে। আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন। কোনও মানুষকে অযথা হেনস্থা করবেন না।”
ভোটার তালিকা থেকে রাজ্যের দীর্ঘ দিনের ভোটারদের নাম যাতে বাদ না-পড়ে, সে দিকেও নজর রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরুন একটা ছেলে চার দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে, তার নাম বাদ দিয়ে দেবেন? তা কি হয়?” এই সূত্রেই জেলাশাসকদের ‘চোখ-কান খুলে রাখার’ পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের কাজে যে তিনি সন্তুষ্ট নন, তাও বুঝিয়ে দেন। বিহারের পর এই রাজ্যেও ভোটার তালিকায় সমীক্ষার কাজ শুরু করতে পারে কমিশন। কমিশনের তরফে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু বলা না-হলেও এই কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকবেন, সেই বিএলও-দের একাংশকে দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৭-১৮ জুলাই প্রশিক্ষণ চলেছে দিল্লিতে। রবিবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কলকাতার নজরুল মঞ্চে। রবিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালও নজরুল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দিল্লিতে প্রশিক্ষণের বিষয়টি রাজ্য জানতই না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই তিনি বলেন, “জেলাশাসকদের একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। অনেক সময় দেখছি জেলাশাসকেরা দায়িত্ব দিচ্ছেন নীচের কাউকে। এই যে ১০০০ লোককে দিল্লি নিয়ে গিয়েছে প্রশিক্ষণ দেওয়াতে। জেলাশাসকদের উচিত ছিল আমাকে বা মুখ্যসচিবকে বলা। কিন্তু তাঁরা সেটা করেননি।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে ভিন্রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘নির্যাতনে’র প্রসঙ্গও। বাংলার যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরে আসতে চান, তাঁদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম এবং মন্ত্রী মলয় ঘটককে আলোচনায় বসতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, রাজ্যের প্রায় ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত। তাঁরা রাজ্যে ফিরে এলে তাঁদের ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। করে দেওয়া হবে রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও।
প্রশাসনিক কাজের অগ্রগতি নিয়েও আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্ষা মিটলে পঞ্চায়েতগুলিকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। স্থানীয় সমস্যাগুলির সমাধান ২ অগস্ট থেকে শুরু হতে চলা ৬০ দিন ব্যাপী ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতে করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প ‘জলস্বপ্ন’-তে এখনও পর্যন্ত ৯৮ লক্ষ ৪৯ হাজার পরিবার পরিষেবা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই প্রকল্পে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হল, ১ কোটি ৭৫ লক্ষ পরিবারের কাছে বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়া। এই প্রকল্পে কেন্দ্রের সাহায্য মিলছে না, এমন অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী সাংসদ, বিধায়কদেরও এগিয়ে আসার আর্জি জানান। তিনি জানান, রাজ্য এই প্রকল্পে বরাদ্দ হওয়া অর্থ খরচ করবে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলি ৫ শতাংশ করে অর্থ দেবে। সাংসদদের তহবিল থেকে ১ কোটি এবং বিধায়কদের ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। সে ক্ষেত্রে এই কাজ অনেকটাই সেরে ফেলা যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
Tags
#Mamata Banerjee